রোমানিয়া চ্যাটার্জী, পাণ্ডুয়া
ছোট থেকেই বর্ষাকাল বর্ষা প্রিয় ঋতু।
ধূসর রঙের মেঘের নীচে কচি সবুজ রঙের পাতা দেখার মজাই আলাদা।
আমার কাছে বর্ষা মনে শুধুই ইলিশ মাছ ভাজা আর খিচুড়ি নয়, বর্ষা মানে অনেক মজার আনন্দ, অনেক স্মৃতি।
তখন ক্লাস থ্রি কী ফোর, তখন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টি পেলেই হল, রেইনকোট পরে রাস্তার জমা জলে নেমে যেতাম।
রেইনকোট পরে রাস্তার ওই জমা জলে লাফাতে খুব ভালো লাগত। সাদা কাপড়ের জুতো ভিজে গিয়ে যা তা অবস্থা!
আর এখন?
বর্ষায় রাস্তার জমা জলে পা পড়লেই বিরক্তিই লাগে বেশি। সেইসব অনাবিল আনন্দ আর কোথায়! সেই সব সঙ্গীও নেই, দিনও অন্যরকম।
হুহু বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুল থেকে ফেরা, সেও এক মজা। ধোঁয়া ধোঁয়া চারপাশ। মনে হত একটা জ্যান্ত জলছবি মধ্যে দৌড় দিচ্ছি। আর মাখামাখি হয়ে যাচ্ছি জলরঙে।
বৃষ্টির জল পড়ে চারিদিকে সোঁদা মাটির গন্ধ, বাদলা পোকা,ব্যাঙের ডাক মন দূর থেকে দূরে। কী যেন অজানা খুশিতে মনের মধ্যে হুটোপুটি লাগত। ছোটবেলায় ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না হঠাৎ খুশির কারণ। বৃষ্টি নামল মানেই যেন উৎসব লেগে গেল একটা।
একবার একটা ঘটনা ঘটেছিল। কোনদিন ভোলার নয় সে ঘটনা।
আমি, আমার খুড়তুতো দাদা আর দিদি এই তিনজন মিলে এক বর্ষার দিন বিকালে সাইকেল নিয়ে বামুণ ডাঙার হাটগিয়েছিলাম।
রাস্তায় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। মেঘ ডাকছে। বাজ পড়ছে। অন্ধকার হলে গেল চারপাশ।
খুব ভয় পেয়েছিলাম। তিনজনেই তো ছোট।
মনে আছে, রাস্তাতে ধরে একটা মাটির বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলাম আমরা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে। বিকেল বেলা মাঠ থেকে তখন গোরু ছাগল ফিরছিল অনেকে। তারাও আমাদের সঙ্গে ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।
আর একবার একটা ঘটনা হয়েছিল।
সেভেন কী এইটে পড়ি, সকালে টিউশন যাব।
প্রচন্ড বৃষ্টি, যেতে পারবনা আবার না গেলেও হবে না, তাই বাধ্য হয়ে যেতেই হল ।
ছাতা নিয়ে সাইকেল চালিয়ে অঙ্ক টিউশন যাচ্ছি ।
তারপর হল কী , সাইকেলের চাকা কাদাতে আটকে গেল। আর আমি ভূ-পতিত। ভিজে কাদায় একেবারে আছাড় যাকে বলে!
সারা গায়ে কাদা মেখে ভূত হয়ে যখন স্যার এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, তখন ব্যাচ-এর সবাই আমাকে দেখে হেসে কুটিপাটি!
গম্ভীর অঙ্ক'র স্যার আমার জন্য নিজের দিদির জামাকাপড় এনে দিয়ে সে যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।