সন্দীপ রায়, নিউটাউন
বর্ষা আমার সঙ্গে জড়িয়ে। ক্যানভাসে-তুলিতে-দেখায়-শোনায়।
বছরের এই সময়টা জলরঙে বুঁদ হয়ে থাকি। ঘরে বাইরে একেবারে থইথই ব্যাপার। জানলায় চোখ রাখলেই দেখি আকাশটা কীভাবে বদলে বদলে যাচ্ছে সব সময়। সকালে একরকম। দুপুরে একরকম। আবার সাঁঝবেলায় সে আর এক রকম। সারাক্ষণ বদলের খেলায় মেতে থাকে। সে সবই আমার ক্যানভাসের সাবজেক্ট।
বর্ষাকে আমরা যেভাবে দেখি বাকি সবাই যে তেমনটাই দেখে এমনটা নয়। তার অপূর্ব রোমান্টিক ধারাটিতে মন রাখতে গিয়েও ধাক্কা কম খাই না।
ভুলতে পারি না বানে ভেসে যাওয়া মানুষ। ভেঙে যাওয়া ঘর। তছনছ জীবন এড়াই কী করে!
কিন্তু নিজের জানলা দিয়ে ওই অঝোরধারায় দিকে তাকালে অদ্ভুত শান্তি পাই। ওই একটাই শব্দ। তাতেই মগ্ন চরাচর। কী যে তার অনুভূতি!
আসলে সব কিছুরই দুটো দিক থাকে। এই জানলা কিংবা ছাদ থেকে আমরা যতটুকু বর্ষাকে দেখতে পাই, বর্ষার ক্যানভাস তার চেয়ে অনেক অনেক বড়। অপার তার ব্যাপ্তি।
বাংলা পেরিয়ে দেশের অন্য প্রান্তের বর্ষার কথা যদি ভাবি সে বহু রূপে বদলে যায়। অন্য অন্য দেখায় সমাগত।
পাহাড়ের একটু ওপর দিকে উঠলে দেখি সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে, রহস্যময় মুহূর্তে বৃষ্টির জন্ম।
বহুবার পাহাড়ে গিয়েছি। ইনস্কেপ করতে।
একবার সেরকমই রা-বাংলায় গিয়েছি। আউটডোরে ছবি আঁকতে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ ঝেঁপে বৃষ্টি এল। কাগজপত্র সব গুটিয়ে একটা ঘরে ঢুকে বসলাম। একটা সময় বৃষ্টি থেমেও গেল। রোদ ফুটল ফের। আমি আবার শুরু করলাম।
এই যে আলো-ছায়ার খেলাটা এটা এভাবে পাহাড়েই দেখা যায়। বর্ষার সময় পাহাড়ে গেলে আরও ভাল ভাবে। পাহাড়ী নদীগুলো আরও বেগবতী হয়।
এই দেখাগুলোই মনে ঘুরপাক খায় আর ছবিতে উঠে আসে।
সব মিলিয়ে বর্ষাকাল আমার কাছে দারুণ ব্যপার। তারওপর আমি বাঙালি। জল ভালবাসি। তাই জলকে বিভিন্নভাবে দেখতে পারি। আমার কাজে তারা ধরা দেয়। নদী আসে ছবিতে বারবার। বর্ষা কখন যেন আমার ছবি-জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে।