সোমশ্রী অধিকারী, কলকাতা
শীতের কলকাতা নিয়ে আজ কিছু লিখতে বসে বড়ো নস্টালজিক হয়ে পড়ছি। বারবার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কলকাতার শীতকাল মানেই তো রংবেরং-এর টুপি বয়স্ক মানুষদের মাঙ্কি টুপি, চাদর , আর সোয়েটারের মেলা আর রেড রোডে ঘন্টি বাজিয়ে হেড লাইট জ্বালিয়ে কুয়াশার বুক চিরে ট্রামের দেখা পাওয়া। শীতের কলকাতা মানে রাস্তার কুকুরগুলোর গুটিশুঁটি মেরে শুয়ে থাকা। শীতকাল পরিযায়ী পাখির মতো....খুব অল্প কয়েক দিনের অতিথি । তাই বাঙালি যে কটা দিন আমেজ পায় প্রাণভরে উপভোগ করে।
শীত পড়তে না পড়তেই গরম জামা কাপড় , কম্বল সব বেরিয়ে পড়ে তবে সেই লেপ তৈরী করা ধুনুরী দের খুব বেশী চোখে পড়ে না । বরং আমরা এখন শৌখিন কম্বলে বেশী অভ্যস্ত । ঠাকুমা দিদিমার হাতের তৈরী করা কুলের আচার , বড়ি শীতের রোদে শুকোতে দেওয়াও আমরা এখন ভুলতে বসেছি। তবে শীত কাল মানেই কিন্তু কলকাতায় ভুটিয়া দের দেখা পাওয়া। তারা রংবেরং-এর পসরা সাজিয়ে বসে কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে। শীতকালে সেখানে যেতে না পারলে বড় মন কেমন করে । তার সাথে আসেন কাশ্মীরী শাল বিক্রেতারা । তাদের ঝোলা থেকে একে একে বেরোয় পশমিনা শাল ,জ্যাকেট, ফেরণ ইত্যাদি । সাইকেল নিয়ে তারা চষে ফেলে কলকাতার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত।
এ ছাড়া আছে নলেন গুড় আর জয়নগরের মোয়া যা মফস্বল থেকে কলকাতায় আসে। তখন কলকাতার বেশির ভাগ মিষ্টির দোকানে মোয়া আর গুড়ের হাতছানি। তবে কলকাতায় কুয়াশা পড়লেও টাটকা খেজুর রসের স্বাদ পাওয়া দুষ্কর।
শীতের কলকাতায় আরেকটা উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন কোম্পানীর সার্কাস। তখন তাদের দৌলতে বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা জিমন্যাস্টিক দেখিয়ে কলকাতাকে মাতিয়ে রাখে । তবে যখন পশু পাখির খেলা দেখানো হতো তখন অনেক মানুষের ভিড় হতো.....এখন দর্শক অনেক কম। প্রচুর মানুষ শীতকালে কিন্তু কলকাতা দেখতে আসেন। কলকাতাও সে সময় অপরূপ সাজে সেজে ওঠে।
আর যে কথাটা না বললেই নয় সেটা হল পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসব পালন। কলকাতা তখন মোহময়ী হয়ে ওঠে।
এছাড়া বো ব্যারাক এর বড়দিন পালন ও তাদের তৈরী বিশেষ খাবার শীতের কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ। আর একটা কথা না বললে এই লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে... তা হলো ভোর বেলায় চায়ের দোকান খুলে উনুন জ্বালিয়ে কুয়াশার মধ্যে প্রাতঃভ্রমণকারী চা-প্রেমী দের হাতে ধোঁয়া ওঠা ভাঁড় তুলে
দেওয়া।
জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে....শীতের কলকাতা তারই দৃষ্টান্ত।