সুগত চক্রবর্তী, হাওড়া
বেঙ্গালুরুর মত চকচকে এমন একটা ভীষণ সম্ভাবনাময় শহর ছেড়ে আসার আগে মানসিক ঠাণ্ডা লড়াইটা জোরদার করতে হয়েছিল। না, নিজের সঙ্গে নয়। একটা সাজানো পারিপার্শ্বের সঙ্গে, আগামী দিনে উড়ে আসা সাম্ভাব্য বক্রোক্তিগুলোর সঙ্গে। ধীরে ধীরে সেই লড়াইয়ের ঢাল তরোয়াল জোগাড় করে নেওয়া গেলেও ব্যাঙ্গালোরের ফ্ল্যাট থেকে ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্ট হয়ে কোলকাতা এয়ারপোর্টে নেমে সেখান থেকে বাড়ি, এই জার্নিটা এক কথায় ভয়াবহ। কিন্তু এই সব লড়াই একটা জায়গায় এসে থেমে যায়। মনে হয় এখান থেকে সমস্ত লড়াই লড়ে নেওয়া যায় সহজেই। পৃথিবীর সমস্ত কঠিন প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাওয়া যায় যেখানে বড়ো হয়েছি সেখানের মাটিতে।
আসলে কী জানো তো? দেশের ভৌগলিক সংজ্ঞা এবং দর্শনগত সংজ্ঞা এক নয়। ভূগোল শেখায় কাঁটাতার, নদী নালা, পাহাড় ইত্যাদি দিয়ে বিচ্ছিন্ন জনবসতিকে দেশ বলে। আর বুকের ভেতর যে দেশটা আছে সেটা পাড়ার মাঠ, পুকুর, চা-কচুরি-রোলের দোকান, কাকু - জেঠু - মামা -মাসীর বাড়ি, রেডিওতে মহালয়া শোনা থেকে শুরু হয়ে নিজের বাড়ির বিছানায় শেষ হয়ে যায়। এক কথায় কমফোর্ট জোনকেই আণুবীক্ষণিক দৃষ্টিতে দেশ বলে। এর সীমানা বাড়ে আত্মোপলব্ধির চর্চার মাধ্যমে।
এই আত্মোপলব্ধির জন্য একটা গোটা জীবনও অনেক সময় কম পড়ে। কিন্তু হ্যাঁ, অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য কোনোভাবেই, হ্যাঁ কোনওভাবেই দেশে ফেরার অন্তরায় হতে পারে না। দিনের শেষে প্রত্যেকটা প্রবাসী মানুষের মনে একটা কথাই বাজতে থাকে। ‘আসলে দেশের মাটির ব্যাপারটাই আলাদা’।