পঙ্কজ মল্লিক তাঁর হাতে লেখা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ দিয়েছিলেন বাবাকে

সূহৃতা রানা ঘোষ

হাওড়া 

 

blog-suhirta

 

ছোটবেলার পুজো মানে আমার কাছে ভীষণ মজার ছিল। একেবারে অন্যরকম, এখনকার প্রজন্ম যেভাবে পুজো কাটায় তার থেকে একেবারে আলাদা। আমার বাবা ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। সেই কারণে মহালয়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত নানা জায়গায় প্রোগ্রাম। তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি, আমাকে তো আর অন্য কিছু গান গাওয়ার সুযোগ দিত না, কিন্তু মহালয়ার প্রথমে আর শেষে শাঁখ বাজানোর দায়িত্বটা আমার ছিল। বিশ্বাস করতে পারবেন না, ওই শাঁখ বাজানোতেই কী আনন্দ!ওই আনন্দতেই পুজোর দিনগুলো কেটে যেত। রিহার্সাল চলত। সবাই আসত কিন্তু প্রোগাম শুরু হবে আমাকে দিয়ে- এই ব্যাপার ভীষণ মজার।

তারপর বড় হলাম। এই ক্লাস সিক্সে বোধহয় পড়ি তখন থেকে শুরু হল মহালয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গে নৃত্য। দুর্গার পার্টটা আমার থাকতই থাকত। খুব মজা হত। চারদিকে পঞ্চমী অবধি অনুষ্ঠান। নতুন জামা, খাওয়াদাওয়া। পুজোর নতুন জামাগুলো পরেই প্রোগ্রাম করতে যেতাম, কারণ আলাদা খুব একটা ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হত না। বাবা আমাদের একটা দিনই কলকাতায় ঠাকুর দেখতে নিয়ে যেতেন সবাই। তারওপর টানা প্রোগ্রাম থাকত। আমরা প্রোগ্রাম করতে দিল্লিতেও যেতাম।  সেটা পড়ত সপ্তমীতে। রাত জেগেও অনুষ্ঠান হত অনেকসময়। এভাবেই পুরো ছোটবেলাটা কেটেছে। নতুন জামা কবে কোনটা পরব, এবেলা একটা ওবেলা একটা- এইভাবে জামা গুনে রাখতাম। অষ্টমীর সকালে শাড়ী তো পরতেই হবে, অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। এইভাবেই কেটে যেত ছোটবেলার পুজো। তবে আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজোর দিনগুলো ছিল আরও একটু বিশেষ।

মহিষাসুরমর্দিনী আলেখ্য, যা আজও রেডিয়োতে বাজানো হয়, যা দিয়ে পুজো শুরু হয় বাঙালির, পঙ্কজ মল্লিকের হাতে লেখা সেই গানের আসল পাণ্ডুলিপি আমার বাবার কাছে ছিল। বাবার গান শুনে পঙ্কজ মল্লিক তাঁকে ডেকেছিলেন। তাঁর গ্রুপে গান করতেন বাবা, সেই সূত্রেই এই প্রাপ্তি ঘটেছিল। সেই পাণ্ডুলিপি খুব যত্নে রাখতেন বাবা। যেন পুজো করতেন। পুজোর সময় বের করা হত। বাবা তাঁর সব ছাত্রছাত্রীদের হাতে লিখে স্ক্রিপ্ট দিতেন। তাঁর সামনে রাখা থাকত পঙ্কজ মল্লিকের আসল লেখাটা।

আমার কাছে আজও যত্ন করে রাখা আছে সেই খাতা।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...