একসময় বাবার হাত ধরে পুজো কাটত, এখন কাটে ছেলের হাত ধরে

শুভাশিস্ দত্ত

বেহালা

 

আমার ছোটোবেলায় দুর্গা পুজো শুরু হত বিশ্বকর্মা পুজো থেকে, আসলে আমার ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা ছিল মারাত্মক;  যাতে ওই দিন বৃষ্টি না হয় সেই জন্য আমার ঠাকুমাকে বলতাম আগের দিন রাতে তারা বেঁধে রাখতে। আমার একটা বিশ্বাস জন্মেছিল ওঁর প্রতি। ঠাকুমা তারা বাঁধলেই পরের দিন ঝকঝকে রোদ্দুরের দেখা মিলবে।  যাইহোক, শুভ মহালয়া থেকেই পড়াশোনার পাঠ একেবারেই বন্ধ।

সামনেই মা দুর্গার আগমন। মনে পড়ে, আমাদের বাড়িতে একটা মস্ত বড় মারফি রেডিয়ো ছিল।  আমার মায়ের দায়িত্ব ছিল ৫ ভাই-বোনকে ভোর ৪টের সময় ডেকে তোলা।  আর সেই মন্ত্র মুগ্ধ করা বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের দরাজ কন্ঠের ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর’....

blog-suvasis-1

 

আহা! এখনও যেন গায়ে কাঁটা দেয়। কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ছি! মনে পড়ে রেডিয়োর ‘মহালয়া’ শেষ হতেই দাদুর জন্য তর্পণ করতে হাওড়া চলে যেতেন বাবা। মহালয়ার দিন বাবা আমাদের সকল ভাই-বোনেদের নিয়ে খিদিরপুরে বাটার দোকানে জুতো কিনতে নিয়ে যেতেন।  সেই জুতো বক্সে যত্ন করে রেখে দিতাম আর মহা সপ্তমীতে হত তার উদ্বোধন।

 

blog-suvasis-2

নতুন জুতো পরে পায়ে ফোস্কা নিয়েও খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরনো চাই। নবমী এলেই সকলের চোখে মুখে এক গভীর অমাবস্যা নেমে আসত। বিজয় দশমীর দিন মা ও বাবাকে সবার আগে প্রণাম করে বন্ধুরা মিলে একত্রিত হয়ে বিজয় দশমী করতে বেরিয়ে পড়তাম। তাছাড়া পুজোর গান, প্যান্ডেলে বসে একটু গল্প গুজব- ঠিক আড্ডা বলব না কারণ সেই সময়ে আড্ডা মারার সাহস বা ছাড়পত্র আমার ছিল না। এই স্মৃতি চারণের সময়কাল  ১৯৭৫-১৯৭৬ তখন আমার বয়স তেরো কি চোদ্দ।  

blog-suvasis-3

এখন পুজোটা একদম অন্যরকম। বাবা-মাও আর নেই। বছর তিনেক হল সহধর্মিণী ও নেই, যার সঙ্গে আমার যৌবন ও পরবর্তী যৌবনের পুজোগুলো কাটত।

একসময় বাবার হাত ধরে পুজো কাটত, এখন কাটে ছেলের হাত ধরে।  সব কিছু পাল্টে গেলেও এই ষাট বছর বয়সে এসেও পুজোর আনন্দটা সেই কৈশোর আর যৌবনের মতই সবুজ। বাংলা আর বাঙালির দুর্গা পুজোর রূপ রস গন্ধের উচ্ছ্বাস যতদিন বাঁচব ততদিন এক অবর্ণনীয় উত্তেজনার অনুঘটক হয়ে থেকে যাবে।

blog-suvasis-4

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...