ছোটবেলায় দোল (হ্যাঁ, তখন সবাই দোল-ই বলতাম - হোলি কি জানতামই না) মানেই একটা আলাদা রোমাঞ্চ।
আগে থেকেই পুরনো রঙ-চটা জামা কাপড় রাখা থাকত দোলের দিন পরবো বলে। সকালে উঠেই সেগুলো পরে আমি আর টুম্পা ভাই বোন বেরিয়ে পড়লাম- নতুন কেনা রং ভরা পিচকিরি হাতে নিয়ে দোল খেলব বলে। ছোটবেলাতে আবিরের অত চল ছিল না - পিচকিরি দিয়ে লোকেদের জামা-তে রঙ দিতেই বেশি আমোদ।
গোপাল, দেবেন, ছবি, মুন্নী কে খুব করে রঙ ছিটিয়ে বেশ খুশি খুশি লাগছে - তখন দেখি সামনের বাড়ির রাজুদা পেল্লায় একটা পিচকারি বার করছে - অ্যালুমিনিয়ামের, দেখতে অনেকটা সাইকেলে হাওয়া ভরার পাম্পের মত - সেটা দিয়ে চল্লিশ হাত দূরের লোককেও রঙ দেওয়া যায়। তার কাছে আমাদের পুঁচকে পিচকিরি তো নস্যি!
তবে কিনা সেই মেগা পিচকারি দিয়ে আমার রঙ দেবার আগেই কে একজন পেছন থেকে এক বালতি রঙ মাখা জল রাজুদার মাথাতে ঢেলে দিল - আর আমাদের সবার তাতে সে কি আনন্দ।
এর মাঝে ভোলা এসে খবর দিল বেপাড়ার কিছু বখাটে ছেলে এসেছে সবাইকে বাঁদর-রঙ মাখাবে বলে। দৌড় .. দৌড় .. দৌড়.. আমরা সবাই এক ছুটে মুন্নিদের পুরনো বাড়ির উঠোনে গিয়ে লুকিয়ে পরলাম। দরজাতেও খিল লাগিয়ে একটু ফাঁক করে দেখছি কী করে ছেলেগুলো। সব কটা ছাই রঙের রঙ মেখে নিজেরাই বাঁদর যেন এক এক খান! তবে কাউকে না দেখতে পেয়ে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে ছেলেগুলো - আর তার মাঝেই রাজুদা দেখি দরজার ফাঁক দিয়ে মেগা পিচকারি গলিয়ে তাদের গায়ে রঙের ফোয়ারা ছুটিয়ে দিল। তখন বাঁদরগুলোর লেজ গুটিয়ে সে কি দৌড়! রাজুদার মেগা পিচকারি সুপার হিট- সেবার দোলে রাজুদাই আমাদের সুপার হিরো!
এখন আর দোল খেলা তেমন হয় না। তবে দোলের কিছুদিন আগে থেকেই কলকাতা শহর বসন্তের রঙ মেখে রঙিন হয়ে থাকে - তাতে মনের কোনেও রঙ লাগে বইকি।
গত দুটো বছর যদিও দোলের দিন কেটেছে অজানা অসুখের আগমনের আশঙ্কাতে - দুরুদুরু বুকে।
এবার মনে হচ্ছে সেই দুঃস্বপ্নের দিন শেষ হতে চলেছে- অবশেষে - জীবনে রঙ ফিরে আসুক আবার .. সবার .. দোলের দিনে সেই কামনাই করি!