সুজয় বন্দোপাধ্যায়, আলিপুর, কলকাতা
শীতকাল হল কুঁড়েদের বাদশা। আমি ঠিক কুঁড়ে নই, কিন্তু হি-হি ঠাণ্ডায় স্নানের ডাক পড়লেই হয়ে যাই!
আমার শীত মানে রাত নামা কলকাতা। মাঝে মাঝে অফিস থেকে হাঁটা পথে বাড়ি ফিরি। দেখি ফুটপাতের ধারে আগুন জ্বলে উঠেছে। কাঠ, কাগজ জড়ো করে আড্ডা চলছে। কখনও কখনও আবার দেশওয়ালি ভাষায় গান। ভোজপুরি বুঝি না, তবু একা রাস্তায় হিমেল রাতে সেই গান আমার মন্দ লাগে না।
কালো অন্ধকারের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা আগুন থেকে তাত ওড়ে, আমার হাতটা নিশপিশ করে, শাটার খুঁজি। পিঠের ব্যাগে ক্যামেরা ঘুমিয়ে কাদা।
সারাদিন ‘প্রপার অ্যাঙ্গেল’ খুঁজে চলা চোখ জানে এই মুহুর্ত হাতছাড়া করতে নেই, কিন্তু মন? সে যে অন্য কথা বলে। কিছু দৃশ্য শুধু চোখেই না হয় লেগে থাক।
কান থেকে হেডফোনটা নামিয়ে রাখি। কাজ চালানো হিন্দি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি সেই গানের ভাষা। এ যেন এক অন্য কলকাতার গল্প।
ট্যাক্সি, রিকশায় দিন কাটে ওদের। অনেক দূরে ফেলে রেখে এসেছে গ্রাম। পরিবার। মাঠ-ঘাট জীবন।
শীতের রাতে জমে যাওয়া হাতে ওম মাখতে মাখতে ফিরে আসে সে জীবনের গল্প। আমিও দলে ভিড়ে যাই। গল্প শুনি ওদের।
বাড়ি ফেরার রাস্তাটা বলে দেরী হয়ে যাচ্ছে...কিন্তু সব সময় তার কথা শুনতে নেই।
শীতের এই সময়টা আমি রাস্তা হাঁটি রাতের ছবি খুঁজতে খুঁজতে। শীতের রাতে কলকাতাটা যেন একদম বদলে যায়। দুম করে যেন একটা অন্য শহরে এসে পড়েছি।
আমি থাকি একটা পুরনো পাড়ায়। পুরনো কলকাতার চেহারা আজও কিছুটা অক্ষত আছে সেখানে। স্ট্রিটলাইটও সব সাদা হয়ে যায়নি। লাল ইঁটের পুরনো বাড়িতে হলুদ আলো এসে পড়েছে। হিম-কুয়াশা মেশা সেই হলুদ আলোতে গাছের পাতার ছায়া। রাত-বিরেতের একা রাস্তায় হঠাৎ চোখ পড়লে কেমন যেন গা ছমছম করে, তবে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই...
যতই ধরার চেষ্টা করি এ ছবি কোনওদিন মনের মতো হয়ে ওঠে না ক্যামেরায়।