কলকাতার শীতঃ সংলাপ 'হ্যাঁ রে, তোর ঠান্ডা লাগে না!'

পারমিতা দোলুই

গিরিশ পার্ক

 

 

আমার কাছে ‘কলকাতার শীত’ মানে ভোরের আগুন পোহানো। সন্ধ্যায় ভুট্টা পোড়া। শীতের সকালে স্কুল ইউনিফর্ম-এর সঙ্গে ফুলহাতা সোয়েটার ফুল প্যান্ট আর হি-হি বাচ্চারা বোঝায়। আর থাকে ম্যাঙ্কি ক্যাপ!

 যদিও মাংকি ক্যাপ শুধু বাচ্চাদের জন্য নয়, বাঙালি জাতির সবরকম বয়সীদের জন্য আবিষ্কার হয়েছিল, তবে সে গল্প এখন থাক। এখন বরং সেই বিষয়ে কথা বলা যাক যেটা ছাড়া শীতে বেঁচে থাকা মুশকিল ।  

সেটা কী বলুন তো?

কী আবার! সোয়েটার!

 তবে এই  সোয়েটার আবার আমার বরাবরের শত্রু। যাকে বলে একেবারে চুলোচুলি সম্পর্ক, এক্কেবারে তাই!

এত ভালো-ভালো সব জামা, তাদের এত্ত ভালো-ভালো রং, সবব ঢাকা পড়ে যেত ‘বোরিং’ সোয়েটারে নীচেতে। সব সাজ নষ্ট! মাথার ওপর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে গলাতে গিয়ে চুলটুল ঘেঁটে একশা! এস ব কারও ভালো লাগে বলুন তো!

 সোয়েটার নানা ডিজাইনের বা যতই ‘ভালো দেখতে’ হোক না কেন তা তো আর একসঙ্গে কুড়ি পঁচিশটা কেনা যেত না! তাই এক ঢোল, এক কাঁসি... রোজ রোজ লাল-কালো-মেরুন...মাঝে –মধ্যে বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লে সাদা কিংবা ঘিয়ে...

paromita-1  

ছোট থেকেই  আমার ‘এক্সট্রা গিয়ার’। স্থির হয়ে এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসতে পারতাম না। সারাক্ষণ লাফালাফি-ঝাঁপাঝাপি চলত। তার কারণেই কিনা জানি না, শীত আমাকে খুব একটা ছুঁতে পারত না।

তাই আমার সোয়েটারটাও আর সোয়েটার থাকত না। কখনও সে কাঁধে গামছা। আবার  কখনও তার মস্তানি চলে আসত একেবারে গলায়।  কখনও হয়ে যেত কোমরে বেল্ট।  

সোয়েটার কে যে এত রকম ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা হয়তো সোয়েটার নিজেও ভেবে উঠতে পারত না। তাই ‘টায়ার্ড’ হয়ে নিজেকে আমার হাতেই ছেড়ে দিত!

 স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সোয়াটার এখনও একই।

paromita-2

 এখনও সে আমার মনে (পড়ুন গায়ে) জায়গা করে নিতে পারেনি। এখনও আমরা সোশ্যাল ডিসটেন্সি ডিসটেন্সসিং মেনে চলি।

আর ছোটবেলায় শোনা সেই এক সংলাপ 'হ্যাঁ রে তোর ঠান্ডা লাগে না! ' এটাও এখনও বদলায়নি । শুধু কখন যেন বলার মানুষগুলো বদলে গিয়েছে ঋতুর মতোই...

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...