ছোটবেলায় শুনেছি গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাটের ইলিশের ঝোল ফোটার গল্প:সোনালী রায়

বাঙাল বাড়ির মেয়ে ও পুত্রবধূ হওয়ায় ইলিশ আর ইস্টবেঙ্গল প্রেমটা বোধ-হয় বংশপরম্পরায় এসে পড়েছে, অনেকটা সহজাত প্রবৃত্তির মতোই। যতদূর মনে পড়ে ইলিশের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় তিন বছর বয়সে। দাদু ছিলেন নাকালিয়া পাবনার মানুষ, ছোটবেলায় বহুবার গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাটের ইলিশের ঝোল ফোটার গল্প শুনেছি। একদিন বাবা, মার কাছে পদ্মার ইলিশের গল্প করছিলেন। হঠাৎ খেলতে খেলতেই সে গল্প শুনে, মায়ের কাছে ইলিশ খাওয়ার আবদার করা। তখন অবশ্য ইলিশ মাছ নয়, খেতে চেয়েছিলাম 'ইলিশ মাম'। যেহেতু একেবারেই ছোট ছিলাম, তাই মা-ই ভাজা মাছ কাঁটা বেছে খাইয়ে দিলেন। সেই প্রথম ইলিশের স্বাদ পেলাম। প্রথম অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল। বড় হতে লাগলাম আর চলল ইলিশের সঙ্গে বারংবার মুলাকাত। কখনও ঝোলে, কখনও ভাপায় আর গরম ভাতে ইলিশ মাছ ভাজা, তার তেল আর কাঁচা লঙ্কা! এক পিসিমার বাড়িতে খেয়েছিলাম, মিষ্টি কুমড়ো ডুমো ডুমো করে কেটে ইলিশের পাতলা ঝোল - যেন অমৃতের মতো স্বাদ! আনারসী ইলিশ রাঁধার চল ছিল বাপের বাড়িতে।

Ilish Praban

ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে দারুণ কচুর শাক রাঁধতেন আমার শাশুড়ি, আজও সে স্বাদ মুখে লেগে আছে। পরবর্তীতে ইলিশের মাথা দিয়ে কচুর শাক অনেক খেয়েছি কিন্তু অমনটির মত নয়। আমি নিজেও ইলিশের নানান পদ রাঁধি, আমার পরিজনরা তৃপ্তি করে খান। নিজের ঢাক নিজের না পেটানোই ভালো! তবে বলে যাই, আমি ইলিশের কোন কোন পদ রাঁধি? ভাজা, কালোজিরে-কাঁচা লঙ্কা-বেগুনের ঝোল তো আছেই। নারকেল, সর্ষে, মরিচ বাটা দিয়ে ভাপা, মানকচুর পাতায় ইলিশ পাতুরি, পাঁচ ফোড়ন আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে পাকা তেঁতুলের কাঁথ দিয়ে ইলিশের টক - এ সবের স্বাদ কেবল ইলিশপ্রেমীরাই বুঝবে অর্থাৎ বাঙালিরা। আজকাল ইলিশ বিরিয়ানিও রাঁধি। ইলিশের ল্যাজার ভর্তাও দারুণ একটা রেসিপি। গরম ভাতে বেশ লাগে। ইলিশের ডিম ভাজা, ডিমের তেল ঝাল অতুলনীয়!

আমার মনে হয় যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ ইলিশ-আশ। ইলিশ ছাড়া বাঙালির পাত অসম্পূর্ণ।


সোনালী রায়

ছাত্রছাত্রীদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর সংবিধানের ধারা পড়িয়ে দিন কাটলেও, রান্না করতে ভালোবাসেন। কেক থেকে পুডিং, রসগোল্লা থেকে নিত্যদিনের ডাল-ভাত সব রান্নাতে নতুনত্ব আনাই শখ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...