ক্লাস টু’তে পড়ার সময় প্রথম রং-তুলি ধরতে শিখেছিলাম বাবার কাছে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কখন যেন জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল রং-তুলি। শুধু অভ্যাস নয়, ছবি তখন নেশা। আকণ্ঠ বুঁদ হয়ে থাকা যায় এমন নেশা। স্বপ্ন একটাই ‘শিল্পী হব’।
আর্ট কলেজে পড়ার ইচ্ছে ছিল খুব। ভর্তির সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই কলেজের ছাত্র আর হয়ে উঠতে পারিনি। তবে ছবির প্রতি ভালোবাসা আর খিদেটা দ্বিগুণ হয়ে উঠেছিল।
কলাভবন আর আর্ট কলেজে বন্ধুরা ছিল। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। তাদের সিলেবাসটা আমি বাড়িতে নিজের মতো করে চর্চা করতাম। বার তিনেক কলাভবনে কাজও করেছি তাদের সঙ্গে। সেই সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীদের কাছে তালিম নিই।
এভাবেই চলছিল। মাথার ছবি কেবল ছবি-আঁকা আর রং-তুলির ঘোর। কিন্তু তবু ছবির জগৎ থেকে নির্বাসন নিতে হল। জীবন তখন খরস্রোতে বইছে।
চাকরী কখনও করতে চাইনি। শুরু করলাম গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ আর প্রিন্টিং প্রেস। খুব ব্যস্ত থাকতাম। আস্তে আস্তে এটাই হয়ে উঠল রুটি-রুজি-সংস্থান। পারিবারিক দায়িত্ব এল কাঁধে। এত কিছুর মধ্যেও মাঝে মাঝেও মনে মধ্যে উঁকি দিয়ে যেত আমার ক্যানভাস যাপনের দিনগুলো। ভাবতাম একটু যদি সুযোগ পাই, আবার ছবি আঁকা শুরু করব নতুন করে। কিন্তু সেটা যে কবে, জানতাম না।
বন্ধুদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতাম না। প্রদর্শনীর ত্রিসীমানায় ঘেঁষতাম না। শুধু ভয় করত, ক্যানভাস দেখলেই যদি আবার রঙের নেশাটা পেয়ে বসে!
তবে সত্যি সত্যি ফিরলাম একদিন ক্যানভাসের কাছেই। সালটা ২০১৩। মানসিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার মহৌষধি।
অনেক বাধা পেরিয়েছি, কিন্তু রঙ-তুলির সঙ্গতটা আর ছাড়িনি। প্রিন্টিং-প্রেস চলছে, আমার আঁকাজোকাও চলছে সঙ্গে সঙ্গে।
ওয়াটার কালারে ল্যান্ডস্কেপ করতে ভালোবাসি।
ইতালী, কাসানোভা, আলবেনিয়া থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছি। নেপাল, সুইজারল্যান্ডে আমার কিছু ছবি ব্যক্তিগত সংরক্ষণ হয়েছে। ২০২১-এ ইতালীতে প্রদর্শনী আর ডেমোস্ট্রেশনের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছি। আশা রাখছি উড়ান পথে কোভিড বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।