ফিরে পেলাম হারানো ক্যানভাস

আমি রতন দে।

একটি অত্যন্ত গরিব ঘরের ছেলে হয়ে আজ যে সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছি তা সম্পূর্ণই শিল্পকে ভালোবাসার ফলে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের ঠাকুর দেবতার ছবি দেখে আঁকার চেষ্টা চলত। এলাকার মাঠে কীর্তনের অনুষ্ঠানের সভা মঞ্চে একবার আবির দিয়ে বাবা লোকনাথের ছবি এঁকেছিলাম। কিছুটা যেন তার পুরস্কার হিসেবেই ৬ বছর বয়সে আঁকার স্কুলে জায়গা হয়েছিল।

আমার আঁকার মাস্টারমশাই (মিন্টু পাল) কোনোদিন আমার কাছ থেকে একটা টাকাও পারিশ্রমিক নেননি। সংসারের অনেক টানাপোড়েন। ক্লাস সেভেন থেকে রোজ ভোরবেলা খবরের কাগজ আর  দুধের প্যাকেট বাড়ি বাড়ি পৌঁছানোর কাজ শুরু করলাম।

পড়াশুনা আর ছবি আঁকার খরচ এভাবেই চালাতাম। এমন কাজ করতে চাইতাম যাতে আঁকার খিদে আর পেটের খিদে দুই-ই মেটে। সেরকম কাজই খুঁজে বেড়াতাম। ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার পরই  তাই টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় সেট ডিজাইনের কাজে যুক্ত।

তারপর এল রামজি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ। আমার কাজ শুটিং ফ্লোরে সেট ডিজাইন।প্রায় দুই আড়াই বছর ক্যানভাস থেকে দূরে। ফের নতুন করে টানাপোড়েনে পড়লাম। এবার আর আর্থিক নয়, পারিবারিক। তার জেরেই হায়দ্রাবাদ ছাড়লাম।

জীবনের ঘূর্ণিতে কিছুটা পাক খাওয়ার পর ফের অন্য পথে। এবার গেলাম বাংলাদেশ। সেখানকার একটি বিখ্যাত আর্ট ক্র্যাফট শপের ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করলাম। ২০১৬ থেকে ২০১৮ টানা দু’বছর। ফিরে পেলাম হারানো ক্যানভাস। ওখানে থাকতে থাকতেই খুব আগ্রহ জেগেছিল ওখানকার রিক্সা দেখে। এক একটা রিক্সা যেন এক একটা ক্যানভাস। রং-রেখা চোখে টেনে নিত। শিখে নিয়েছিলাম রিক্সা পেইন্টিং।

২০১৯-এ ঘরে ফিরলাম। তখন থেকে আবার পুরোপুরি ছবির জগতে। এটা আমার জীবনে খুব বড় একটা টার্নিং। একটি সুনিশ্চিত জগতের থেকে সরিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে আবার নিজেকে গড়ে তোলা, তাও আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে। ঝুঁকি ছিলই। তবু ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম। ছবির চর্চা, প্রদর্শনী ও ছবি নিয়ে পড়াশুনা। সব আবার নতুন করে শুরু। আসলে মনের খিদের কাছে হার মানলো পেটের খিদে, তাই জিত হল ক্যানভাসের। আমি হৃদয়ের কথা শুনেছিলাম।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...