আমি ডঃ সুপ্রীতি দত্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় ডক্টরেট করেছিলাম। তখন আশির দশক। সময়টা আজকের থেকে একেবারেই আলাদা। তারপর সরাসরি অধ্যাপনার জগতে। সেখানেও তিন দশক পার।
প্রথম জীবনে আঁকার চর্চা শুধুমাত্র প্রাক্টিক্যাল খাতাতেই বন্দী ছিল। বাইরে সেভাবে করা হয়ে ওঠেনি। প্রথম সিরিয়াসলি শুরু করি আজ থেকে প্রায় ১১ -১২ বছর আগে। ছোটবেলার স্কুলের মাস্টারমশায় বিজয় চক্রবর্তীর উৎসাহে। তবে তার পর থেকে আর কোন ছেদ পড়েনি চর্চায় !
কলকাতার একাডেমি অফ ফাইন আর্টস, তথ্যকেন্দ্র সহ বেশ কিছু গ্যালারি ও কলকাতার বাইরেও একক প্রদর্শনী করেছি। আটটি একক প্রদর্শনী এবং তিরিশটি যৌথ।
ছোটোবেলায় গ্রামে মানুষ। পড়াশোনার বিষয় উদ্ভিদবিদ্যা। যে কারণেই হোক না কেন বেশিরভাগ ছবিতেই বিষয় হয়ে ওঠে প্রকৃতি আর পরিবেশ। প্রকৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাও উঠে আসে ছবিতে। বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করি। ভালো লাগে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালাতে।
কাগজ , ক্যানভাস বা বোর্ডের ওপর জলরঙ , সফ্ট প্যাস্টেল ও অ্যাক্রেলিকে কাজ করতেই বেশি আরাম পাই।
কখনও বাতিল কলম, কখনও অচল পয়সা, কাগজের টুকরো দিয়ে কোলাজধর্মী কাজ করেছি। মূলত পরিবেশ ভাবনাই কাজ করেছে বাতিল জিনিসকে নতুন রূপ দিয়ে ফিরিয়ে আনার পিছনে।
কর্মক্ষেত্রে থেকে অবসর নিয়েছি। এখন আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী রং-তুলি-ক্যানভাস। এ আমার কাছে জীবন আর বেঁচে থাকার উৎসব। বরাবর পাশে পেয়েছি পরিবারকে।
সবচেয়ে বড় কথা যেহেতু ছবি থেকে রুজি রোজগারের চিন্তা করতে হয়নি সে কারণে বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রায় পুরোপুরি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পেরেছি । আর তার ফলে এই পরিণত বয়সে এসে সৃষ্টির আনন্দ অন্তরের অন্তঃস্থলে গভীর ভাবে অনুভব করতে পারি। আমার মনে হয় এএক বিরাট বড় পাওয়া !
সর্বোপরি একজন জীববিজ্ঞানের চর্চায় নিয়জিত প্রকৃতি প্রেমিক (Naturalist )হিসাবে আজকের এই পরিবেশের অবক্ষয় মনকে যখন বিচলিত করে, তখন যে আমার তুলি তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে, সেটাই অনেক স্বস্তিদায়ক বলে মনে হয়।