নরম রূপোলি আলো মনের কোণে ঠিকরে পড়লে ভুলিয়ে রাখি নিজেকে তুলির টানে। সৃষ্টি তাই মনের বশ্যতা স্বীকার করে। অজস্র ভাবধারা কল্পনায় ভুলিয়ে রাখে আমাকে। আমি ছবি আঁকি। নেশায় ছবি আঁকি।
মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আঘাত-সংঘাত মেনে উঠে এসেছি। ১৯৮০ সালে মাধ্যমিকে পঞ্চম স্থান অধিকার করি। তার পর থেকেই তুলিতে রং দিতে শুরু করি। ভালোলাগা ভালোবাসাতে পরিণত হয়। প্রথম প্রথম ছবি নকল করে আঁকা চলত। বিশেষ আঁকা শেখবার শিক্ষক ছিল না। আমি নিজের চেষ্টাতেই নকল করতাম ছবি। ধীরে ধীরে কল্পনার পরিধি বেড়েছে। বাস্তবের দৃশ্যকে ক্যানভাসে রূপ দিতে চেয়েছি। চোখের লেন্সকে মনের জানালা মেনে আলোর পথে ঠিকানা খুঁজেছি। তৈরি হয়েছে ক্যানভাস।
বাস্তবতা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। অপরাধের প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত মানসিকতা বুঝতে হয়েছে সমাজ সংসারের রক্ষক হিসেবে। পুলিশের চাকরিতে মানুষের জটিল মনস্তত্ত্ব বুঝতে হয়েছে। তখনও আমি কর্তব্যে অবিচল। ব্যস্ততায় দিন গুনছি। এই সব কিছুর মধ্যেই বড়ো বড়ো কাঁচের ওপর, কাঠের ওপর,পাথর, প্লেট, পালকের ওপর ছবি এঁকেছি। বাস্তব দৃশ্যকে আর মনের কল্পনাকে তুলির টানে মানসিক চাপ মুক্ত হয়েছি।
এ এক উত্তরণের পথ। নিজেকে মুক্তির পথ। শুষ্ক পেপারে চ্যাটচ্যাটে তাজা রঙ আমার মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখেছে অনবরত। বার বার সৃষ্টি তাই জীবন্ত হয়েছে।
কোভিড চলাকালীন সময়ে দুর্বল হওয়া মনকে রঙের বন্ধনে আবদ্ধ করেছি হাসপাতালে বসেই। আনন্দের রূপ কল্পনা করেছি। পাশের রোগীদের মানসিক যন্ত্রনা ভোলানোর চেষ্টা করেছি। অবসাদবদ্ধ জীবনকে সে সময়ে আঙুল দেখিয়েই ছবি এঁকেছি। অন্ধকারে মশাল জ্বালানোর মন নিয়ে কোভিডের মানসিক চাপ মুক্ত করতেই ছবি এঁকেছি। নতুন দিনের অপেক্ষায় সুস্থ হবার প্রহর গুনেছি।
আমার ছবি জয়পুর, দিল্লি, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। মানুষকে যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি দিতে,
ভালোলাগাকে বাস্তবে রূপ দিতে বারবার বলি----
মনবসন্তের খেলায় মেতেছি কান পাতা বাতাস কড়া নাড়বে বলে......
আঁকার পথে উচ্ছন্নে গেছি ভালোবাসব বলে.....
কল্যাণ মুখোপাধ্যায়, (ডিআইজি সিআইডি কলকাতা পুলিশ)